Tuesday, February 27, 2024

স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে বিদেশে পড়ার জন্য জিআরই স্কোর




ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য যে বিষয়ে পড়তে চান না কেনো, জিআরই পরীক্ষা ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

জিআরই কী?  

জিআরইর পূর্ণরূপ গ্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন। সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণী দক্ষতা যাচাই এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য। গবেষণাধর্মী কাজের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণ ক্ষমতা প্রখর হতে হয়। আর সেটি যাচাইয়ের জন্য অনলাইনে ৩ ধাপে এই পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। 

পরীক্ষা পদ্ধতি

জিআরই ২ ভাবে দেওয়া যায়। সাবজেক্ট টেস্ট ও জেনারেল টেস্ট। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীরা মূলত জেনারেল টেস্টই দিয়ে থাকেন। এটি ৩ ধাপে গ্রহণ করা হয়। যেমন:

অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং,

ভার্বাল রিজনিং

ও কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং।  

অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং

অ্যানালিটিক্যাল অংশটি মূলত লিখিতভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়। শূন্য থেকে ৬ স্কেলের মধ্যে নম্বর দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতি যাচাই বা মূল্যায়ন করবেন এই অংশে মূলত সেটা পরখ করা হয়। সাধারণত ভালো প্রস্তুতি থাকলে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ পাওয়া যায়। 

এখানে আবার দুটো অংশ থাকে। ইস্যু ও আর্গুমেন্টেটিভ অংশ। প্রতিটি অংশের জন্য আধাঘণ্টা করে মোট একঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।              

ভার্বাল রিজনিং
                         
ভার্বাল অংশটির জন্য সবচেয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। এটা ২ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক ধাপে ২০টা করে প্রশ্ন থাকে, যার জন্য ৩০ মিনিট করে মোট ১ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। এখানে ৩ ধরনের প্রশ্ন আসে। নিয়মিত ইংরেজি সাহিত্য পাঠ ও বিভিন্ন নিবন্ধ পাঠ করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। 

টেক্সট কমিপ্লিশন

শূন্যস্থান পূরণ। একটা শূন্যস্থান থাকলে ৫টা অপশন, সেখান থেকে একটা সঠিক উত্তর বাছাই করতে হয়। একাধিক শূন্যস্থান থাকলে প্রত্যেকটার জন্য ৩টা কেরে অপশন থাকবে। সেখান থেকে একটা করে বাছাই করতে হয়। 

সেনটেন্স ইকুইভ্যালেন্স

এটাও এক ধরনের শুন্যস্থান পূরণ। তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। একটা শূন্যস্থান পূরণের জন্য ৬টা অপশন থাকে, সেখান থেকে দুইটা সঠিক উত্তর বাছাই করতে হয়। ইংরেজি ভাষার শব্দভাণ্ডার ভালো থাকলে এ অংশে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে। 

রিডিং কমপ্রিহেনশন

এ অংশে ৩-৪টা অনুচ্ছেদ (প্যাসেজ) থাকে। পড়ে বুঝতে কী বোঝাতে চাচ্ছে। এর জন্য কী কী প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। একটা প্রশ্ন দিয়ে বলতে পারে, প্যাসেজের কোন লাইন দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে প্যাসেজ থেকে একটা লাইন সিলেক্ট করতে হবে।

কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং

আরেকটি ধাপ হলো কোয়ান্টেটিভ রিজনিং বা ম্যাথ সেকশন। অর্থাৎ, এ অংশ গণিত সংক্রান্ত বিষয়াদীর প্রাধান্য থাকে। 

এটাও ২ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক ধাপে ২০টা করে প্রশ্ন মোট ৪০টা প্রশ্ন থাকে। ২০টা প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এখানে ৪ ধরনের প্রশ্ন আসে।

স্কোরিং প্যাটার্ন

সব মিলিয়ে জিআরইতে ৩৪৬ নাম্বারের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ভার্বাল রিজনিংয়ে ১৭০, কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিংয়ে ১৭০ ও অ্যানালিটিক্যাল রাইটিংয়ে ৬ নম্বর। 

জিআরইতে ৩৪৬ নম্বর থাকলেও ভার্বাল রিজনিংয়ে ৪০ নম্বর, কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিংয়ে ৪০ নম্বর ও অ্যানালিটিক্যাল রাইটিংয়ে ৬ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। অর্থাৎ পরীক্ষায় অংশ নিলে ভার্বাল  কোয়ান্টিটেটিভ অংশে ১৩০ নম্বরের পর থেকে আপনার প্রাপ্ত নম্বর যোগ হবে। 

ভার্বাল ও কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিংয়ে মোট ৩৪০ নম্বরের মধ্যে ৩০৫ মোটামুটি স্কোর এবং ৩১৫-এর বেশি হলো ভালো স্কোর। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩২০-এর উপরে স্কোর থাকলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সহজ হয়। তবে মানবিক বা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবজেক্টগুলোর জন্য ৩০৫ মোটামুটি মানের স্কোর। 

এ ছাড়া এনালিটিক্যাল রাইটিংয়ে ৩-এর ওপরে পাওয়া উচিৎ।   

কোন দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা নিতে জিআরই প্রয়োজন

ইটিএস বা এডুকেশনাল টেস্টিং সেন্টারের মাধ্যমে বিশ্বের ১৬০টি দেশের ১ হাজারের বেশি কেন্দ্রে জিআরই পরীক্ষার প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা হয়। 

সাধারণত আমেরিকা, কানাডা, ইউকে, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হতে  জিআরই'র প্রয়োজন হয়। 

জিআরই স্কোর শিক্ষার্থীদের স্কলারাশিপ বা ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও ভালো ভূমিকা রাখে । বিশেষত বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণায় আমেরিকাতে যেতে চান। আর এ ক্ষেত্রে ভর্তি হওয়ার জন্য জিআরই সবচেয়ে বেশি উপযোগী। 

শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে কেন?  

বাংলাদেশ থেকে জিআরই স্কোরসহ আবেদন করে প্রতিবছর বহু শিক্ষার্থী আমেরিকা, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়তে যাচ্ছেন। যদিও আমাদের দেশে অভিভাবক বা তরুণদের বড় একটা অংশের পছন্দ সরকারি চাকরি বা বিসিএস; তবে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ যাওয়ার জন্য আগ্রহী মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। 

জিআরইতে যার যত ভালো স্কোর থাকে, তার তত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশনের সম্ভাবনা থাকে। জিআরইতে ভালো স্কোর থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফান্ডিং পেতে সুবিধা হয় ।

 

 




শেয়ার করুন

0 comments: